মোবাইল ভিত্তিক টাকা পাঠানো বা পাওয়া, দোকানের লেনদেনে, মোবাইলে ব্যালেন্স, অফিসের কাজে, ব্যবসায়িক বিভিন্ন কাজে আরো অনেক সুবিধা ও আস্থার সাথে মানুষ সঙ্গী করে নিয়েছে বিকাশকে। ব্যবসা বানিজ্যর লেনদেনের জন্য অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু যদি বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়, তাহলে ব্যবসা-বানিজ্যের লেনদেন অনেক সহজ ও নিরাপদে করা সম্ভব। এ লেখায় বিকাশের মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য তুলে ধরা হল।
বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট কি?
বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট হল এমন একটি অ্যাকাউন্ট যেখানে আপনি কাস্টমারদের কাছ থেকে পেমেন্ট নিতে পারবেন। দোকান কিংবা ব্যবসা বানিজ্যের কাজে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট বেশি ব্যবহৃত হয়। বিকাশের ৩ নম্বর অপশন Payment এর মাধ্যমে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টধারীদেরকে পেমেন্ট করা হয়।
বানিজ্যিক ভাবে লেনদেন করার জন্য বিকাশের মার্চেন্ট একাউন্ট হচ্ছে সবচেয়ে সুবিধাজনক এবং নিরাপদ মাধ্যম। ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে মার্চেন্ট একাউন্টের সুবিধা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি থাকায় বানিজ্যিক কাজে মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট বেশি ব্যবহৃত হয়।
যেভাবে বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলবেন
প্রথমেই আপনাকে বিকাশ ওয়েব সাইটের এই লিংকটি bkash.com/i-want-register/send-registration-request ভিজিট করতে হবে। এখানে ২টি অপশন থাকবে – Agent এবং Merchant, যেখান থেকে আপনাকে Merchant অপশনটি নির্বাচন করতে হবে। তারপর নিচের মত একটি ফরম আসবে। সেই ফরমটি সঠিক ভাবে পূরণ করতে হবে।
ফরমটি সঠিকভাবে পূরন করে সাবমিট করলে বিকাশ কর্তৃপক্ষ আপনার মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টটি খোলার অনুরোধটি পর্যালোচনা করবে। অতঃপর বিকাশ থেকে আপনার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হবে এবং আপনাকে আপনার নিকটবর্তী বিকাশ অফিসে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। আপনি আবেদনের সময় ফরমটিতে যে তথ্যগুলো প্রদান করবেন উক্ত ডকুমেন্টগুলো সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। এরপর আপনার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বিকাশ আপনার মার্চেন্ট একাউন্টটি চালু করে দিবে।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য যা যা প্রয়োজন
- যেকোনো অপারেটরের একটি মোবাইল নম্বর
- আপনার ছবি যুক্ত পরিচয় পত্র ও তার ফটোকপি (মূল জাতীয় পরিচয়পত্র / ড্রাইভিং লাইসেন্স / পাসপোর্ট)
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স (মেয়াদসহ)
- সচল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট
- টিন সার্টিফিকেট
- ইমেইল অ্যাড্রেস
- মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য প্রতিষ্ঠানের অনুমতিপত্র
সাধারনত দোকান ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে কাস্টোমাররা যেসব পেমেন্ট করে থাকে, সেসব পেমেন্ট নেয়ার জন্যই বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য মোবাইল ব্যাংক থেকে বিকাশ সেরা কারণ বিকাশের ইউজার বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও বিকাশের ব্যবহার সহজ ও নিরাপদ। তাদের অত্যাধুনিক অ্যাপের মাধ্যমেও সহজে লেনদেন করা যায়। বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আপনি বেশ কিছু সুবিধা পেতে পারেন। সাধারন পার্সোনাল বিকাশ একাউন্টে ১.৮৫% চার্জ কাটলেও বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্টে তা তুলনামূলক কম। সাধারনত ১.৭% চার্জ কাটা হয়, কিন্তু এই ফি আপনার প্রতি মাসের লেনদেনের পরিমানের উপর নির্ভর করে আরও কমতে পারে।
তবে ই-ক্যাব (ইকমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ) সদস্যরা বিকাশে ১.৫% ফি এর সুবিধা পেয়ে থাকেন। বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে পেমেন্ট করলে গ্রাহকের কাছ থেকে কোন অতিরিক্ত পেমেন্ট কাটা হয় না। বিকাশের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ক্যাশআউটে নির্দিষ্ট লিমিট থাকলেও, মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে পেমেন্টে কোন লিমিট নেই। গ্রাহকরা দিনে যতবার খুশি এবং যেকোনো অ্যামাউন্ট বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে পেমেন্ট করতে পারবেন।
বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত, শুধুমাত্র ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকেই পেমেন্ট করা যায়। কিন্তু কোন এজেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে কোন পেমেন্ট করা যায় না। তাই যাদের বিকাশ অ্যাকাউন্ট নেই, তারা পেমেন্ট করতে পারেন না। আরেকটি সমস্যা হল মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে এজেন্ট পয়েন্ট বা এটিএম বুথ থেকে ক্যাশআউট করা যায় না। মার্চেন্ট একাউন্ট করার সময় অবশ্যই একটি ব্যাংক একাউন্ট যুক্ত করতে হয়। প্রতি কার্যদিবসে যে ট্রানজেকশন হবে তা তার পরের কার্যদিবসে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়ে যাবে। আপনি চাইলেই মার্চেন্ট বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে তাৎক্ষনিকভাবে টাকা তুলতে পারবেন না।
যারা ইকমার্স ব্যবসা করেন, তারা অনেকেই ব্যবসায়িক লেনদেন পার্সোনাল অ্যাকাউন্ট দিয়েই করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ০১/০২/২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি
প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে পার্সোনাল একাউন্টে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫টি লেনদেন কমিয়ে সর্বোচ্চ ২টি করা হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে পার্সোনাল একাউন্টে দিনে ২ বারের বেশি টাকা নেয়া সম্ভব নয়। তাই ব্যবসায়িক কাজের জন্য মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করতেই হবে।
বিকাশের আরেকটি বড় সুবিধা হল তারা বিভিন্ন সময় ডিসকাউন্ট এবং ক্যাশব্যাক অফার চালিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট মার্চেন্টরা বিকাশের সাথে ক্যাশব্যাক বা ডিসকাউন্ট অফার প্রদান করে থাকে, যার ফলে আরও বেশি গ্রাহক আপনার কাছ থেকে পন্য কিনতে আগ্রহী হয়। এছাড়াও মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে পেমেন্ট করতে গ্রাহকরা বেশি আগ্রহী হয়।
বর্তমানে ব্যবসার প্রসার বাড়াতে চাইলে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ নেয়ার সুবিধা আপনাকে অবশ্যই সমর্থন করতে হবে। বাংলাদেশ আগামী ২ বছরের মধ্যে ক্যাশবিহীন লেনদেনের ওপর প্রাধান্য বাড়াতে চাচ্ছে এবং সে পথে এগোতে চাইলে আপনার ব্যবসার অবশ্যই বিকাশ মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট থাকা জরুরী।
মন্তব্য করুন