ব্যাংকঋণের সর্বোচ্চ সুদহারের সঙ্গে বাড়তি ৫ শতাংশ যোগ করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডে সুদ নির্ধারণের বিষয়ে প্রায় তিন বছর আগে নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার সামান্যও বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড সেবা চালু থাকা ৩৭টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টিরই ক্রেডিট কার্ডের সুদহার ২০ শতাংশের বেশি। এ অবস্থায় ক্রেডিট কার্ডের সর্বোচ্চ সুদহার নির্ধারণ করে দেয়ার পথেই হাঁটল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
আগামী ১ অক্টোবর থেকে ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো অবস্থাতেই ২০ শতাংশের বেশি সুদ আদায় করতে পারবে না দেশের ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, ক্রেডিট কার্ডের সুদ অন্য ঋণের সুদের চেয়ে ৫ শতাংশের চেয়ে বেশি হবে না। আর ক্রেডিট কার্ডের সুদহার কেবল অপরিশোধিত বকেয়া স্থিতির ওপর প্রযোজ্য হবে। গ্রাহকেরা ক্রেডিট কার্ডরে মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ উত্তোলন করতে পারেন, এর বেশি নগদ উত্তোলনের সুযোগ নেই।
কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এসব নির্দেশনা লঙ্ঘন করে কোনো কোনো ব্যাংক বিভিন্ন নামে বিভিন্ন প্রকাশ নগদে উত্তোলনযোগ্য ঋণসুবিধা প্রদান করছে, যা ব্যাংকের ঋণঝুঁকি বৃদ্ধি করছে। আবার এ ধরনের ঋণের ওপর অযৌক্তিকভাবে বেশি সুদ আদায় করছে, যা গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে। আবার কোনো ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডের অপরিশোধিত বকেয়া বিলের ওপর লেনদেনের তারিখ থেকেই সুদ আরোপ করছে এবং অপরিশোধিত বিলের বিপরীতে বিলম্ব মাশুল আদায় করছে। এ জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে, সুদহার হবে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ।

কাগজে-কলমে দেশের ৩৭টি সরকারি-বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড থাকলেও সিংহভাগ ব্যাংকেরই গ্রাহক হাতেগোনা। মূলত দেশের ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের প্রায় ৮০ শতাংশই পাঁচটি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে। দেশের ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ড সংখ্যা ১৫ লাখ ৯৭ হাজার ৭৪৮।এর মধ্যে বেসরকারি খাতের দ্য সিটি ব্যাংকেরই কার্ড সংখ্যা ৪ লাখ ৫০ হাজারের বেশি। বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বেসরকারি ব্র্যাক, প্রাইম ও ইস্টার্ন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ক্রেডিট কার্ডের প্রায় ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ডে শীর্ষস্থানীয় সবক’টি ব্যাংকের সুদহারই ২৪ শতাংশের বেশি। এর মধ্যে দ্য সিটি ব্যাংক ক্রেডিট কার্ডে সুদ আদায় করছে ২৪ শতাংশ।
সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে দেশের ব্যাংকগুলোর ঋণের (ক্রেডিট কার্ড ছাড়া) সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। সে হিসেবে ৫ শতাংশ যোগ করে ব্যাংকগুলোর ক্রেডিট কার্ডের সুদহার হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ। কিন্তু এখনো দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকই ক্রেডিট কার্ডে সুদ নিচ্ছে ২৪-২৭ শতাংশ। এর বাইরে কিছু ব্যাংক কম সুদও নেয়। এর ফলে বেশির ভাগ গ্রাহকের সুদ কমে আসবে।
মন্তব্য করুন